প্রিয় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী, আশা করছি সকলে ভালো আছ। তুমরা ডিপ্লোমাতে ভর্তি হবার পর অনেকেই বুঝতে পারো না কি করে সময়কে ব্যবহার করা উচিত, অনেক ক্ষেত্রে তুমরা সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকনা। অনেকেই ডিপ্লোমা ভর্তি হবার পরেই ভেবে থাকে যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি অভাব হবে না।
এ ভাবনাগুলো সম্পূর্ণ ভূল। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী বেকার। বর্তমানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি পেতে হলে তুমাকে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তোমার ভিতর এক্সট্রা কিছু থাকতে হবে।ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা মানেই শুধু থিউরি (পাঠ্য-পুস্তক) নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনায় থিউরি ও ব্যবহারিক জ্ঞান দুটোতেই ভালো হতে হবে। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পাশ করার সাথে সাথে চাকুরী পাচ্ছে আবার অনেকেই পাশ করার ২য় বছর বা ৩য় বছর বা আরো পরে চাকুরী পাচ্ছে। যারা পাশ করবার সাথে সাথে চাকুরী পাচ্ছে তারা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সচেতন ছিল। একারনে নিজের ক্যারিয়ার সম্বন্ধে আগেই সচেতন হওয়া উচিত।
মনে কর একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি সার্কুলার হয়েছে যেখানে ২০ জন ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ার নিবে। সেখানে ৫০০ জন ছাত্র আবেদন করেছে যার মাঝে তুমিও রয়েছ। সবার সিভিতে উল্লেখ করা তাদের ব্যাক্তিগত পরিচিতি ও পড়াশুনা এবং ফ্রেশ ছাত্র।
এখন সেই কোম্পানী ৫০০ জন থেকে ২০ জন কি করে নিবে??? ভাবছো পরীক্ষা, ভাইবা এইসব থেকে!!!! প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একদম ভিন্ন। অনেক কোম্পানী রয়েছে যেখানে সিভি দেখেই তারা কল করে ভাইবার জন্য। কিন্তু তারা কখনো ৫০০ সিভি দেখেই সবাইকে কল করবেনা।
এখন তোমার সিভিতে যদি তুমি উল্লেখ করে দাও যে তোমার বিষয়ভিত্তিক সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স করেছ, কন্ট্রোলিং পারো, তুমি ব্যবহারিক প্রজেক্ট করেছ ইত্যাদি। তাহলে হয়তো তারা তুমাকে ভাইবার জন্য কল দিতে পারে। এই লেখাটি মূলত এই উদ্দেশ্যে লেখা যে পলিটেকনিক শিক্ষার্থী চাকুরি পেতে হলে নিজেকে কিভাবে তৈরী করবে।
বিঃদ্রঃ অনেক প্রাইভেট কোম্পানী রয়েছে যেগুলো পরীক্ষা ভিত্তিতে নিয়োগ করে, এটা প্রত্যেকটি কোম্পানীর ব্যক্তিগত নিয়ম কানুনের উপর নির্ভর করে।ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি পাওয়া তাদের জন্য কঠিন যারা সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করে না, ব্যবহারিক কাজে যাদের অভিজ্ঞতা নেই।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি পেতে নিজেকে যেভাবে তৈরি করতে হবে
প্রথম ধাপে রেজাল্ট ভালো হতে হবে। রেজাল্ট ভালো হলে চাকুরীর ক্ষেত্রে ভাইবা বোর্ডে ইন্টারভিউয়াররা আপনাকে অবশ্যই সবার চেয়ে আলাদা দৃষ্টিতে বিবেচনা করবে। তাই বলে এমন নয় যে রেজাল্ট ভালো হলেই জব হয়ে গেল! আর হ্যা, রেজাল্ট খারাপ হলে যে জব হয় না তা নয়।
কি করে ভালো পয়েন্ট পাবেনঃ
- ক্লাসের homework, পড়া ঠিক সময় শেষ করবে। কথায় আছে Be sincere not serious. সময়ের কাজ সময়ে করবে দেখবে সবকিছু ঠিক হবে।
- শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, শিক্ষকের হাতে অনেক অপশন রয়েছে।শিক্ষকদের হাতে অনেক প্র্যাক্টিক্যাল মার্ক রয়েছে। স্যারদের সামনে নিজেকে ফোকাস কর, স্যার তুমাকে বেশি স্মরণ রাখবে।
- সম্ভব হলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন কর, এতে তুমাকে সবাই চিনবে।
ব্যবহারিক ক্লাস মিস করবে না কখনোই। ব্যবহারিক ক্লাস বুঝার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের সহায়তা নিবে, শিক্ষক খুব বেশি সময় না দিতে চাইলে তোমার বন্ধুরা মিলে গ্রুপ তৈরি কর। গ্রুপ স্টাডি করবে, এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারিক ক্লাস গুলো নোট করে রাখবে।
অনেক পলিটেকনিকের অধীনে ৩ – ৬ মাস পরপর বেসিক ট্রেড কোর্স হয় যেগুলো অল্প টাকায় করানো হয়। এই কোর্সগুলো অবশ্যই করবে এবং পাশাপাশি নোট করে রাখবে।
সিনিয়রদের সহয়তাই বিষয়ভিত্তিক কাজ কোথায় শেখা যায় তা জেনে নিবে।
প্রয়োজনে তোমার বিভাগের বড়-ভাইদের সাথে যোগাযোগ রাখবে, তারা কি করছে, কোথায় জব করছে বা ইন্টার্নি করছে ইত্যাদি। তাদের কাছে থেকে পরামর্শ চাইবে।
ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ(অষ্টম সেমিস্টারের ট্রেনিং) করবে। সময় খুব ভালোভাবে ব্যবহার করবে। ইন্টার্নশিপ থেকে খুব ভালো শেখার চেষ্টা করবে যাতে ইন্টার্নির অভিজ্ঞতা সিভিতে উল্লেখ করে দিতে পারো।
পরিশেষে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা বলেছি তার সবকিছু আমাদের ব্যাক্তিগত মতামত। তুমরা চাইলে এর সাথে ব্যাক্তিগতভাবে নতুন কিছু যুক্ত করতে পারো বা বাদ দিতে পারো। দিন শেষে অনেকেই অনেক কিছু বলবে কিন্তু সিদ্ধান্ত তোমার কারন জীবন তোমার। ভালো-মন্দ সবকিছু বিবেচনা করে নিজের সিদ্ধান্ত কে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।