পাওয়ার সিস্টেমে ট্রান্সফরমার অনেক বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। ট্রান্সফরমার টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা আমরা জানি ট্রান্সফরমার একটি স্থির ডিভাইস যেখানে কারেন্টের সাপেক্ষে এসি সাপ্লাই এর ভোল্টেজ বাড়ানো হয় নয়ত কমানো হয়। রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা ছাড়া বেশিরভাগ সময় ট্রান্সফরমার সক্রিয় থাকে।
ট্রান্সফরমার কার্যপদ্ধতি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য ট্রান্সফরমার টেস্ট করা হয়ে থাকে।
ট্রান্সফরমার টেস্ট এর ধরন
ফ্যাক্টরিতে যে ধরনের টেস্ট করা হয়
- Type Test
- Routine Test
- Special Test
- Pre-Commissioning Tests
- Periodic/condition monitoring tests
- Emergency tests
Type Test:
এটি এমন এক ধরনের ট্রান্সফরমার টেস্ট যার সাহায্যে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল প্যারামিটার ঠিক আছে কিনা ও তাদের গুনগত মানের সঠিক যাচাই এই টেস্টের মাধ্যমে করা হয়।
Type test এর মধ্যে রয়েছে
- ট্রান্সফরমারের রেশিও টেস্ট
- ট্রান্সফরমারের ওয়িন্ডিং রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ
- ট্রান্সফরমার ভেক্টর গ্রুপ টেস্ট
- ইম্পিড্যান্স ভোল্টেজ/শর্ট সার্কিট ইম্পিড্যান্স এবং লোড লস পরিমাপ
- নো লোড লস এবং কারেন্ট পরিমাপ
- ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ
- ট্রান্সফরমারের ডাই-ইলেকট্রিক টেস্ট
- তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে টেস্ট
- লোড ট্যাপ চেঞ্জার টেস্ট
- ট্যাংকের ভ্যাকুয়াম টেস্ট এবং রেডিয়েটর
- ট্রান্সফরমারের ওয়িন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট
- ট্রান্সফরমারের HT ও LT সাইডের ফেজ টু ফেজ কয়েল ওয়িন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট
- ট্রান্সফরমারের রেশিও টেস্ট
- ট্রান্সফরমার ভেক্টর গ্রুপ টেস্ট
- ইম্পিড্যান্স ভোল্টেজ/শর্ট সার্কিট ইম্পিড্যান্স এবং লোড লস পরিমাপ
- নো লোড লস এবং কারেন্ট পরিমাপ
- ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ
- ট্রান্সফরমারের ডাই-ইলেকট্রিক টেস্ট
- লোড ট্যাপ চেঞ্জার টেস্ট
- ওয়েল প্রেশার টেস্ট
Special Test
- ট্রান্সফরমারের ডাই-ইলেকট্রিক টেস্ট
- Three phase Transformer এর zero-sequence impedance টেস্ট
- শর্ট সার্কিট টেস্ট
- নয়েজ লেভেল পরিমাপ
- নো-লোড কারেন্টে হারমোনিক পরিমাপ
- ফ্যান এবং ওয়েল পাম্প থেকে গৃহীত পাওয়ার পরিমাপ
- বুখলজ রীলে, টেম্পারেচার ইন্ডিকেটর, প্রেশার রিলিফ ডিডাইস, ওয়েল সংরক্ষিত সিস্টেম টেস্ট
ট্রান্সফরমার রেশিও টেস্ট
ট্রান্সফরমার রেশিও টেস্ট এমন এক ধরনের ট্রান্সফরমার টেস্ট যা রুটিন টেস্ট হিসেবে করা হয়। HT সাইডের সাপেক্ষে LT সাইডের ভোল্টেজ রেশিও ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য এই টেস্ট করা হয় অর্থাৎ ডিজাইনে যে রেশিও হিসেব করে HT ও LT কয়েল প্যাঁচানো হয়েছে সে পরিমান রেশিও ঠিক আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করাই হলো এই টেস্টের মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে HT সাইডে ইনপুট ভোল্টেজ ভেরিয়েশন হওয়া স্বাভাবিক বিধায় HT ওয়িন্ডিং এ বেশ কিছু পরিমান ট্যাপ পজিশন রাখা হয় তাই প্রতিটা ট্যাপ পজিশনেই HT সাপেক্ষে ভোল্টেজ রেশিও পরিমাপ করা হয়।
১১০০০/৪১৫ ভোল্টের থ্রি-ফেজ ট্রান্সফরমার এর ভোল্টেজ রেশিও প্রায় ২৬.৫০৬।
থ্রি ফেজ ট্রান্সফরমারের রেশিও টেস্ট করার জন্য HT সাইডে ৪১৫ ভোল্ট সাপ্লাই দেওয়া হয় ও LT সাইডে এর রেশিও পরীক্ষা করা হয়। প্রতিটা ট্যাপ পজিশনে আলাদাভাবে এই টেস্ট করা হয়ে থাকে।
ভেক্টর গ্রুপ ও পোলারিটি টেস্ট
থ্রি ফেজ ট্রান্সফরমারে ভেক্টর গ্রুপ টেস্ট করতে হয়। হাই টেনশন ও লো টেনশন কয়েলের কানেকশন ডায়াগ্রাম অনুযায়ি বিভিন্ন গ্রুপের ট্রান্সফরমার রয়েছে।
নিচের চিত্র লক্ষ্য করুনঃ
YNd11 ট্রান্সফরমার ধরি,
স্টারে যুক্ত ওয়িন্ডিং আর্থের সাথে নিউট্রাল পয়েন্ট সংযোগ করি।
1U কে HT এর সাথে এবং 2W কে LT সাথে যুক্ত করি।
HT টার্মিনালে তে ৪১৫ ভোল্ট সাপ্লাই দেয়।
ভোল্টেজ পরিমাপ করি টার্মিনাল 2U-1N, 2V-1N, 2W-1N এর মধ্যবর্তী অর্থাৎ HT ও LT এর মধ্যবর্তী ভোল্টেজ।
2V-1V, 2W-1W এবং ২V-1W এর মধ্যবর্তী টার্মিনালের ভোল্টেজ পরিমাপ করি।
YNd11 ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে আমরা পাবো,
2U-1N>2V-1N>2W-1N
2V-1W>2V-1V অথবা 2W-1W
অন্যান্য গ্রুপের ক্ষেত্রে একইভাবে টেস্ট করা হয়।
ডাই-ইলেকট্রিক টেস্ট
ডাই ইলেকট্রিক টেস্ট এমন এক ধরনের টেস্ট যার সাহায্যে ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশনের পরিমান পরিমাপ করা যায়।
হাই টেনশন ও লো টেনশন কয়েলের মধ্যে সরাসরি ইলেক্ট্রিক্যালি কানেকশন নেই তাই এই দুই ওয়িন্ডিং এর মাঝে রেজিস্ট্যান্স থাকা আবশ্যক। আমরা জানি যে রেজিস্ট্যান্সের পরিমান নির্ভর করে ওয়িন্ডিং সমুহের ইন্সুলেশন ও ইন্সুলেটিং ইলিমেন্টের উপর শুষ্কতার উপর। ডাই ইলেকট্রিক টেস্টার মিটারকে মেগার মিটার ও বলা হয়ে থাকে।
ফুল লোড লস / শর্ট সার্কিট / কপার লস টেস্ট
এই টেস্ট করার জন্য লো ভোল্টেজ সাইডকে শর্ট করতে হয়। শর্ট সার্কিট টেস্ট যে কারনে করা হয়ঃ
- কপার লস নির্ণয় করার জন্য
- সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স, রিয়াক্ট্যান্স এবং ইম্পিড্যান্স নির্ণয় করার জন্য
- ইফিসিয়েন্সি এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন নির্নয় করার জন্য
ট্রান্সফরমারের লো টেনশন সাইডে সবগুলো টার্মিনাল শর্ট করে হাই টেনশন সাইডে ঐ ট্রান্সফরমারের রেটেড কারেন্ট সাপ্লাই দিয়ে ওয়াট মিটারের দ্বারা লোড লস পরিমাপ করা হয়। রেটেড কারেন্ট সাপ্লাই দিলে হাই টেনশন সাইডের আউটপুটে যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে ইম্পিড্যান্স ভোল্টেজ বলা হয়।
ওপেন সার্কিট / নো লোড / কোর লস টেস্ট
এই ট্রান্সফরমার টেস্ট করার সময় হাই সাইড ওপেন রাখতে হয় এবং লো ভোল্টেজ সাইড ইকুইপমেন্ট সংযুক্ত করা হয়। ওপেন সার্কিট টেস্ট যে কারনে করা হয়।
- নো লোড কারেন্ট নির্ণয়
- কোর লস নির্ণয়
এই টেস্ট করার সময় রেটেড ভোল্টেজ সাপ্লাই দেওয়া হয়।
ওপেন সার্কিট টেস্টের কানেকশন ডায়াগ্রাম নিচে দেওয়া হয়েছে। ভোল্টমিটার, ওয়াটমিটার, এম্পিয়ার মিটার লো ভোল্টেজ সাইডে যুক্ত করা হয়েছে। এই টেস্টে ট্রান্সফরমার এর LT সাইডে রেটেড ভোল্টেজ সাপ্লাই দেওয়া হয় এবং এই অবস্থায় যে পরিমান কারেন্ট নেয় তাকে নো লোড কারেন্ট বলা হয়। আর এই কারনে HT ট্রান্সফরমারের রেটেড ভোল্টেজ আবিষ্ট হয় আর অন্যদিকে লো ভোল্টেজ সাইডে রেটেড ভোল্টেজ দেয়ায় কিছু কারেন্ট লোড নেয়ার জন্য যে লস হয় তাকেই নো-লোড লস বা কোর লস বলে।
হাই ভোল্টেজ টেস্ট
হাই ভোল্টেজ টেস্ট হলো এমন একটি ট্রান্সফরমার টেস্ট যার মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের ভিতরে ব্যবহিত ডাই-ইলেক্ট্রিক ম্যাটেরিয়াল গুলোর ডাই-ইলেক্ট্রিক শক্তি পরিমাপ করা হয়। আমরা জানি ডাই-ইলেক্ট্রিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ট্রান্সফরমার ওয়েল ব্যবহিত হয়।
হাই টেনশন ও লো টেনশন উভয় সাইডে আলাদাভাবে শর্ট করে হাই টেনশন টার্মিনালে হাই ভোল্টেজের ফেজ ও লো টেনশন টার্মিনালের ট্রান্সফরমার বডির সাথে একত্র করে গ্রাউন্ড সংযোগ দেয়া হয়ে থাকে। এরপর হাই টেনশন রেটেড ভোল্টেজেরর সাধারণত ২.৫ গুন ভোল্টেজ দিয়ে প্রায় এক মিনিটের জন্য টেস্ট করা হয়ে থাকে।
ফেজ টু গ্রাউন্ড এর নির্দিষ্ট দূরত্বে ট্রান্সফরমার ওয়েলের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ অনেক উচ্চ মানের যা প্রায় ৪০ থেকে ৭০ কেভি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১১০০০/৪১৫ স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে হাই টেনশন সাইডে ১১০০০*২.৫ = ২৭৫০০ বা ২৮০০০ ভোল্টেজ দেয়া হয়।
তবে অনেক সময় ২.৫ গুনের কমT দেয়া হয়। ৩৩ কেভি লাইনের ট্রান্সফরমার এর ক্ষেত্রে হাই টেনশন সাইডে ৭০০০০ ভোল্টেজ দেওয়া হয়।
Tags
ইলেকট্রিক্যাল