ওয়াটমিটারের গঠন, কার্যপদ্ধতি এবং সংযোগ পদ্ধতি আলোচনা


আপনি কি জানেন কিভাবে ওয়াটমিটার (Wattmeter) কাজ করে? উত্তরটা যদি “না” হয়, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্যই।

ওয়াট মিটার নিয়ে জানার পূর্বে ওয়াট সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন জেনে নিই,

ওয়াট
সহজ ভাবে বললে ক্ষমতার একক হচ্ছে ওয়াট। আমরা জানি যে কোন যন্ত্র তা ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক কিংবা ম্যাকানিকাল হোক না কেন চলবার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। তেমনি ভাবে কোন যন্ত্র/লোড নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু শক্তি খরচ করে কোন কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে সে হিসাব কেই ওয়াট বলে।
ওয়াট বের করার সূত্রগুলো হলোঃ 
  • P = V * I * Cosθ
  • P = I2 * R * Cosθ
  • P = (V2 * Cosθ)/R
    • P = Power, এর একক ওয়াট

      I = Current, এর একক হলো এম্পিয়ার

      V =  Voltage, এর একক হলো ভোল্ট

      R = Resistance যার একক হলো ওহম

      Cosθ = Power factor যা ফেজ এঙ্গেলের মান

      ওয়াটমিটার কোথায় ব্যবহার করা হয়?
      Real power পরিমাপ করার জন্য ওয়াটমিটার ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে পাওয়ার ব্যবহার করে থাকি তার পরিমান ই ওয়াটমিটার দ্বারা পরিমাপ করে থাকি। এক কথায়, ওয়াটমিটার ব্যবহার করি Watt ( Real power এর একক Watt) পরিমাপ করার জন্য।

      সাধারনত আমরা দুই ধরনের Watt-meter ব্যবহার করে থাকি৷ যথাঃ
      1. ১) DC Wattmeter
      2. 2) AC Wattmeter
      যেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইন্ডাস্ট্রি তে AC Wattmeter ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এজন্য, নিচে AC Wattmeter নিয়ে আলোচনা করা হল।
      AC Wattmeter
      কিভাবে Wattmeter তৈরি করা হয়? (Construction of Wattmeter)
      যেহেতু wattmeter দ্বারা পাওয়ার পরিমাপ করা হয়, (সহজ ভাষায়, পাওয়ার মানে ভোল্টেজ ও কারেন্টের গুনফল) তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে, Wattmeter এর মধ্যে দুইটি কয়েল থাকে।

      ১) Current Coil (C.C)
      2) Potential/ Voltage/ Pressure Coil ( P.C)

      কারেন্ট কয়েলটি কে লোডের সাথে সিরিজে সংযুক্ত করা হয় এবং পটেনশিয়াল কয়েলটি কে লোডের সাথে সমান্তরালে বা প্যারালালে সংযুক্ত করা হয়।

      (ভাল মত বুঝার জন্য নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন)
      ওয়াটমিটার
      কারেন্ট কয়েলকে দুইটি অংশে ভাগ করে দুই দিকে বসানো হয় কিন্তু এদের মাঝের সংযোগ ঠিক থাকে এবং এই কারেন্ট কয়েল দুটির মাঝে পটেনশিয়াল কয়েলটি কে বসানো হয়।

      এখেনে, কারেন্ট কয়েলদ্বয় স্থির থাকে এবং পটেনশিয়াল কয়েলটি ঘুরে ওয়াটমিটার এর রিডিং দেয়। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, ইন্ডিকেটর কাটাটি Potential Coil এর সাথে যুক্ত থাকে।
      যেহেতু পটেনশিয়াল কয়েল টি ঘুরে, সেহেতু অবশ্যই পটেনশিয়াল কয়েল টি ওজনে হালকা হতে হবে। তার মানে পটেনশিয়াল কয়েলে চিকন তার প্যাঁচাতে হবে। এজন্য পটেনশিয়াল কয়েলে চিকন তার প্যাঁচানো হয়।

      আমরা জানি, চিকন তারের মধ্য দিয়ে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে, তারটি পুরে যায়। পটেনশিয়াল কয়েল টি যাতে না পুরে যায় এজন্য পটেনশিয়াল কয়েলের সাথে বড় মানের একটি রেজিস্ট্যান্স যুক্ত করা হয় যাতে পটেনশিয়াল কয়েলের মধ্য দিয়ে কম পরিমান কারেন্ট যায় এবং পটেনশিয়াল কয়েল টি পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।

      Wattmeter কিভাবে কাজ করে? (Working principle of wattmeter) 
      যখন wattmeter কে লোডের সাথে সংযুক্ত করা হয়, অর্থাৎ কারেন্ট কয়েল কে সিরিজে এবং পটেনশিয়াল কয়েল কে সমান্তরালে যুক্ত করা হয় তখন কারেন্ট কয়েলের মধ্যে দিয়ে বেশি কারেন্ট এবং পটেনশিয়াল কয়েলের মধ্যে দিয়ে কম কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

      যখন কারেন্ট কয়েলের মধ্যে দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, তখন কারেন্ট কয়েলের চারদিকে চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয় এবং এই চৌম্বকক্ষেত্র টি পটেনশিয়াল কয়েলের উপর কাজ করে। সুতরাং, কারেন্ট কয়েলের দ্বারা সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র পটেনশিয়াল কয়েল কে ঘুরাতে সাহায্য করে।
      ওয়াটমিটার

      ওয়াটমিটার অভ্যন্তরিন সার্কিট ডায়াগ্রাম
      যখন পটেনশিয়াল কয়েল দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন পটেনশিয়াল কয়েলটি, কারেন্ট কয়েলের দ্বারা সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের কারনে ঘুরতে শুরু করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, Wattmeter এর কাটা টি ঘুরার জন্য কারেন্ট কয়েল এবং পটেনশিয়াল উভয়ের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হতে হয়। এভাবে wattmeter কারেন্ট কয়েল ও পটেনশিয়াল কয়েলের সাহায্যে Watt পরিমাপ করে থাকে।

      যখন কারেন্ট কয়েল ও পটেনশিয়াল কয়েল দিয়ে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন কারেন্ট কয়েলের চারদিকে বেশি ম্যাগ্নেটিক ফ্লাক্স উৎপন্ন হবে এবং যার ফলে পটেনশিয়াল কয়েল বেশি টর্ক অনুভব করবে অর্থাৎ বেশি ঘুরবে মানে বেশি watt দেখাবে।
      ওয়াটমিটার
      তিন ফেজ সার্কিটে ওয়াটমিটার সংযোগ চিত্রঃ
      ওয়াটমিটার
      যদি এই টপিকের উপর আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে টাইপ করে জানিয়ে দিবেন।

      ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন  আল্লাহ হাফেয।

      Post a Comment

      Previous Post Next Post